মেয়ে জন্মানোর পর তাকে আপন করে নেওয়া
মেয়ে জন্মানোর পর তাকে আপন করে নেওয়া
একটি কন্যাসন্তানের জন্ম যেকোনো পরিবারের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তার ছোট্ট হাতের স্পর্শ, মিষ্টি হাসি আর আধো আধো বুলিতে ভরে ওঠে প্রতিটি ঘর। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজও সমাজের কিছু অংশে কন্যাসন্তানের জন্মকে তেমনভাবে স্বাগত জানানো হয় না, যতটা একটি পুত্রসন্তানকে ঘিরে প্রত্যাশা থাকে। এই মানসিকতা শুধু লিঙ্গবৈষম্যকেই প্রশ্রয় দেয় না, বরং একটি নিষ্পাপ শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথেও বাধা সৃষ্টি করে। তাই মেয়ে জন্মানোর পর তাকে আপন করে নেওয়া, তাকে ভালোবাসা ও মর্যাদা দেওয়া প্রতিটি বাবা-মায়ের এবং পরিবারের সদস্যদের অবশ্য কর্তব্য।
প্রথমত, একটি কন্যাসন্তানের জন্মকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, সে আপনারই রক্ত, আপনারই অংশ। তার আগমন আপনার জীবনে নতুন আলো নিয়ে এসেছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্নগুলো আঁকুন। পুত্রসন্তানের জন্য যে ধরনের আশা ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন, কন্যার ক্ষেত্রেও সেই একই রকম ইতিবাচক ভাবনা রাখুন।
দ্বিতীয়ত, আপনার কন্যাসন্তানকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসুন। তার লিঙ্গ পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তার স্বতন্ত্র সত্তাকে সম্মান করুন। তাকে জড়িয়ে ধরুন, তার সাথে কথা বলুন, তার ছোট ছোট আবদারগুলো পূরণ করুন। আপনার ভালোবাসা ও মনোযোগ তাকে আত্মবিশ্বাসী এবং সুরক্ষিত বোধ করাবে। মনে রাখবেন, শৈশবের এই ভালোবাসা তার মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তৃতীয়ত, আপনার কন্যার প্রতি যত্নবান হোন। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনগুলিকে গুরুত্ব দিন। পুত্রসন্তানের মতো তাকেও সমান সুযোগ দিন। তাকে বিদ্যালয়ে পাঠান, তার আগ্রহের বিষয়গুলি খুঁজে বের করতে সাহায্য করুন এবং তার স্বপ্ন পূরণে উৎসাহিত করুন। কখনোই মনে করবেন না যে মেয়ে হওয়ার কারণে তার কোনো কিছুতে সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।
চতুর্থত, আপনার কন্যার সাথে একটি শক্তিশালী মানসিক বন্ধন তৈরি করুন। তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন, যাতে সে তার মনের কথা আপনার সাথে সহজেই ভাগ করে নিতে পারে। তার ভালো বন্ধু হয়ে উঠুন, তাকে সঠিক পরামর্শ দিন এবং জীবনের কঠিন সময়ে তার পাশে থাকুন। একটি সুস্থ মানসিক সম্পর্ক তাকে জীবনে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে।
পঞ্চমত, আপনার কন্যাকে সমাজের একজন সম্মানিত এবং আত্মনির্ভরশীল সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করুন। তাকে সাহসী হতে শেখান, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করুন এবং যেকোনো প্রতিকূলতার মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করুন। তাকে এমন শিক্ষা দিন যাতে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।
মনে রাখবেন, একটি কন্যাসন্তান কোনো অংশে কম নয়। তার মধ্যেও রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। প্রয়োজন শুধু তাকে যোগ্য পরিচর্যা দেওয়া এবং তাকে আপন করে নেওয়া। আপনার ভালোবাসা, সমর্থন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা একটি কন্যাসন্তানকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে কন্যাসন্তানের জন্মকে স্বাগত জানাই এবং তাদের একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন উপহার দিই। কারণ আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
